ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ: নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৫৪, ৭ আগস্ট ২০২৩ | আপডেট: ১৭:০৫, ৭ আগস্ট ২০২৩

শিশুকে স্তন্যপান করানোর প্রয়োজনীয়তা থেকেই প্রতিবছর মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়। ১৯৯০ সালে ইতালির ফ্লোরেন্স-এ ইনোসেনটি গবেষণা কেন্দ্রে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর উদ্যোগে ইনোসেন্টি ডিক্লারেশন নামের একটি স্মারকলিপি ঘোষণা করা হয়। যার ভিত্তিতে ১৯৯২ সালে প্রথম উদযাপিত হয় এই সপ্তাহটি এবং তখন থেকেই জাতিসংঘের দুই সংস্থা সহ সরকারি উদ্যোগে ১ থেকে ৭ আগস্ট বিশ্বের ১২০টির বেশি দেশে পালিত হয় মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ-এর মতে মাতৃদুগ্ধ পান করলে শিশু সুস্থ-সবল হয়ে বেড়ে ওঠে এবং শিশুকে জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শুধুই মাতৃদুগ্ধ পান করালে ৫ বছরের কম বয়েসি আট লাখ বিশ হাজারেরও বেশি শিশুর জীবন রক্ষা পাবে। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো বলছে, গত এক দশকে তাদের মাতৃদুগ্ধ পানের প্রচারের ফলে বিশ্বব্যাপী এর হার ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে ৪৮ শতাংশ শিশু মায়ের দুধ পান করে। পাশাপাশি সংস্থাগুলো মনে করে ২০৩০ সালে মাতৃদুগ্ধ পানের লক্ষ্যমাত্রা ৭০ শতাংশ ধরা হয়েছে, সে লক্ষ্য অনুয়ায়ী এই হার এখনো অনেক কম। তাই নবজাতক শিশুদের মায়েদের সাহায্যার্থে পারিবারিক, সামাজিক এবং কর্মক্ষেত্রে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় সংস্থাগুলো।

মাতৃদুগ্ধ পানে উপকার হয় মা ও শিশু উভয়ের

মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা প্রসঙ্গে ভয়েস অফ আমেরিকা-র সঙ্গে কথা বলেন পপুলার বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফারজানা আফরোজ। তিনি জানান :

- ব্রেস্ট ফিডিং বাচ্চা ও মায়ের মধ্যে একটি বন্ধন তৈরি করে।

- মায়ের দুধে শিশুর জন্য পরিমিত পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, আয়রন, ভিটামিন, প্রোবায়োটিক, এন্টিবডি এসব উপাদান বিদ্যমান যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

- মাতৃদুগ্ধ পান বারবার ডায়রিয়া জনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

- এলার্জি, ওবেসিটি, ইনফেকশন এসবের ঝুঁকিও কমায়।

- মায়ের দুধে পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড থাকে যা শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্টের জন্য জরুরী।

সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের কিছু উপকার হয়। যেমন- সন্তান জন্মের পর মায়ের জরায়ু বড় হয়ে যায়। যে মা সন্তানকে দুধ খাওয়ান তার জরায়ু খুব দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কারণ শিশুকে দুগ্ধ পানে মায়ের শরীরে অনেক অক্সিটোসিন হরমোন বৃদ্ধি পায় যা জরায়ুকে আবার আগের অবস্থানের ফিরিয়ে আনে। তাছাড়া ওভারিয়ান ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেশার এসব রোগের ঝুঁকি কমে যায়। সন্তান প্রসবের পর মায়েরা সেভাবে এক্সারসাইজ করতে পারে না ফলে অনেক সময় ওজন বেড়ে মোটা হয়ে যান। তাই ব্রেস্ট ফিডিং মায়ের জন্য একটা এক্সারসাইজ ।

গরুর দুধ ও ফর্মুলা মিল্ক:

ডা. ফারজানা আফরোজ বললেন, “শিশুদের জন্য গরুর দুধ উপযোগী নয়। গরুর দুধ বাছুরের জন্য উপযুক্ত। আমরা ডাক্তাররা শিশুকে ফর্মুলা মিল্ক দেয়ারও পক্ষপাতি নই।” এগুলো শিশুকে দেয়ার ঝুঁকিসমূহ হলো :

- গরুর দুধে প্রোটিন অনেক বেশি থাকে যেটা বাচ্চার পরিপাকতন্ত্র হজম করতে পারে না ফলে ডায়রিয়া, বদহজম হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

- মায়ের দুধে যে পরিমাণ এন্টিবডি, ভিটামিন শিশুর জন্য উপযুক্ত পরিমাণে থাকে সেগুলো গরুর দুধে থাকে না। সে কারণে গরুর দুধ খেলেও বাচ্চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করতে পারে না।

- ফর্মুলা দুধ অত্যন্ত ব্যয়বহুল যেখানে ব্রেস্ট মিল্ক সহজলভ্য এবং সহজপাচ্যও বটে।

- মায়ের দুধের মত শিশুর জন্য উপকারী উপাদানও ফর্মুলা দুধে অনুপস্থিত ফলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে না।

- ফর্মুলা মিল্ক হজম করতে সময় বেশি লাগে যা শিশুর ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

- ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানোর জন্য যে ফিডার-নিপল ব্যবহার করা হয় সেগুলো থেকেও শিশুর শরীরে জীবাণুর আক্রমণ হতে পারে যা ডায়রিয়া, টাইফয়েড, কলেরার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

- কর্মজীবী নারীদের ক্ষেত্রে ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানোর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। সেক্ষেত্রে তারা ব্রেস্ট মিল্ক পাম্পিং করে স্টোর করে রাখতে পারেন। নরমাল রুম টেম্পারেচারে ব্রেস্ট মিল্ক ৪ ঘন্টা পর্যন্ত ভালো থাকে আর রেফ্রিজারেটরের রাখলে সেটা চারদিন পর্যন্ত ভালো থাকে। আরো বেশি দিন স্টোর করতে চাইলে ডিপ ফ্রিজে রাখা যাবে ছয় মাসের জন্য। মোট কথা ব্রেস্ট মিল্কের কোন বিকল্প হয় না।

জরিপ যা বলছে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যে সব শিশু মাতৃদুগ্ধ পানের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় তাদের অপুষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং বার্ষিক ২.৭ মিলিয়ন বা ৪৫ শতাংশ শিশু মৃত্যুর সাথে অপুষ্টির বিষয়টি সম্পর্কিত। এদিকে বাংলাদেশে জন্মের প্রথম ছয় মাসে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার শহর এলাকায় কমছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৯ (বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে)—এর তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর বা স্তন্যপান করানোর হার ৬৫ শতাংশ। জরিপটি চালায় জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট)। তাদের ২০১১ সালের একই জরিপে এ হার ছিল ৬৪ শতাংশ। নিপোর্টের ২০২১ সালের নগর স্বাস্থ্য জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের ১১টি সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় এ হার আরও কমে ৫২ শতাংশ হয়েছে।

বুকের দুধের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, ফর্মুলা দুধের প্রচারণা ও বিপণনব্যবস্থার প্রভাব, কর্মজীবী নারীদের ছুটির ঘাটতি ও কর্মস্থলে দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা না থাকা, পরিবারের অসহযোগিতা, পাবলিক প্লেস-এ দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা না থাকার কারণগুলো মূলত শিশুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত ঠিকমতো মাতৃদুগ্ধ পান না করানোর ক্ষেত্রে অন্যতম।

সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি